সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন
সাইফ উল্লাহ, হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত ও সংস্কার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজ পিআইসিদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরের দাবি উঠেছে সর্বত্র। অকাল বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সবকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধনির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ৬১ জনকে বিবাদী করে দুদক মামলা রুজু করলেও রহস্যজনক কারণে এমপিদের মনোনিত মেম্বার-চেয়ারম্যান ও প্রতিনিধিদের আসামি না করায় জনমনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। যাদের দ্বারা ফসল তলিয়ে গেলো তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা কেন? যেখানে এমপিরা সঠিকভাবে প্রতিনিধি নিয়োগ না দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোককে পিআইসি কমিটিতে সদস্য সচিব বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার দাবি উঠেছে সর্বত্র। এমপিদের দেয়া প্রতিনিধিরাই ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত ও সংস্কার না করে পিআইসি সভাপতি ও সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগাভাগি করে হরিলুট করেছে। সুনামগঞ্জ জেলায় ৪২টি হাওরে ২৩৮টি পিআইসি’র তালিকা প্রকাশ করলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ২৭০টি পিআইসির কথা গণমাধ্যমকর্মীদের মৌখিক প্রকাশ করলেও ৩২টি পিআইসির তালিকা গোপন রাখেন। ৩২টি পিআইসির বরাদ্দ ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। ২৭০টি পিআইসি কমিটির মাধ্যমে ৮০ কি:মি: বাঁধ ভাঙ্গন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকার তথ্য উপস্থাপন করলেও আরও ১০ কোটি টাকা অজানা রয়ে যায়। সব হাওরের ফসল তলিয়ে গেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানসহ এমপিদের উপস্থিতিতে দুদকের মামলায় গ্রেফতারকৃত সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন ৮০ কি:মি: বাঁধের ভাঙ্গন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি উঠে আসে। তার আগে নির্বাহী প্রকৌশলী বার বার ১০ কোটি ২০ লাখ টাকার তথ্য প্রচার করে আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানায়, প্রত্যেকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পিআইসি দ্বারা নির্মিত ও মেরামতকৃত অংশ ভেঙ্গেই পানিতে তলিয়ে গেছে সোনালী ফসল। ৪২টি হাওরে ২৭০টি পিআইসির মধ্যে দেখার হাওরে, শনির হাওর, কালিয়াকুটা, হালির হাওর, আঙ্গারলির হাওর, করচার হাওর, চন্দ্র সোনারতাল, টাংগুয়ার হাওর, নলুয়ার হাওর, শয়তানখালীর হাওর, গজারিয়ার বাধঁসহ সকল বাঁধে পিআইসির ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সময় পেরিয়ে গেলেও বাঁধ মেরামত না করায় হাওরগুলো অকাল বন্যা ও সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। কোন কোন পিআইসি এক ইঞ্চি মাটিও ফেলেনি দুর্নীতিবাজরা। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন মাঠ পর্যায়ের শাখা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিল দেয়ার আগেই ১৫% কমিশন গ্রহণ করায় বাঁধ মেরামতে মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও তাদের চাপ দেয়নি। ফলে পিআইসিরা মনগড়ামতে মার্চ মাসের শেষের দিকে তড়িঘরি করে মেরামত কাজ শুরু করে। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই কাচা বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, হাওরের ফসল যাদের জন্য অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে তাদের মধ্যে পিআইসিরাই বেশি দায়ি। কারণ এমপিরা তাদের মনোনিত প্রতিনিধি নিয়োগে অবহেলা করেছে। তাদের মনোনিত ব্যক্তিরা পিআইসির সদস্য সচিব ও ইউপি সদস্য/সদস্যা/চেয়ারম্যান পিআইসি সভাপতি মিলে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করেছে। আবার অনেক পিআইসি ভালভাবে কাজ করার কারণে হাওর দেরিতে তলিয়ে গেছে। যারা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছে এবং সময় পেরিয়ে এমপিরা তাদের মনোনিত প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার।